কেমন আছে আরাকান ?

আরাকান পোস্ট

২০১৭ সালের ২৫ শে আগস্ট মাজলুম রোহিঙ্গাদের উপর নেমে আসে ইতিহাসের নির্মম নৃশংস হত্যাকান্ড। সেই নির্মম হত্যাকান্ডে শহীদ করা হয় ৩৬ হাজার রোহিঙ্গাকে। শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ বাবাসহ নারী-পুরুষসহ প্রায় ১২ লক্ষ রোহিঙ্গা পালিয়ে আশ্রয় নেয় বাংলাদেশ, ভারত, মালেশিয়া, ইন্দোনেশিয়া সহ অনেক দেশে। সেই গণহত্যা থেকে জীবন বাঁচাতে সময় সমুদ্রপথে অনেক রোহিঙ্গা সমুদ্রে ডুবে মারা যায়।

সেই গণহত্যার সময়ে প্রায় ৮-৯ লক্ষ রোহিঙ্গা আরাকানে থেকে যায়। আরাকানে অবস্থানরত অনেক রোহিঙ্গাদের মিয়ানমার জান্তার গণহত্যার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে Internally Displaced Persons (IDP) ক্যাম্পে আটকে রাখা হয়। আরাকানের রোহিঙ্গাদের শিক্ষা, চিকিৎসা, ব্যবসাসহ নানাবিধ মৌলিক অধিকারে বিধিনিষেধ আরোপ করে মুসলিম বিদ্বেষী জান্তা সরকার। ধারাবাহিক বিধিনিষেধ আরোপের মাধ্যমে পঙ্গু করতে থাকে মিয়ানমার জান্তা। মসজিদের সালাত থেকে শুরু করে মুসলিমদের বিভিন্ন কার্যক্রম বন্ধ করে অঘোষিত কারাগারে পরিণত করা হয়।

২০১৭ গণহত্যা পরবর্তী পরিস্থিতিঃ

২০২২ সালের মাঝামাঝি সময়ে মিয়ানমার জান্তার মিত্র রাখাইন মগ সন্ত্রাসী আরাকান আর্মি আরাকানকে মুসলিমশূন্য অঞ্চলে পরিণত করতে মিয়ানমার জান্তার সাথে যুদ্ধ শুরু করে। সেই সংঘর্ষ এলাকা থেকে রোহিঙ্গারা পালাতে চাইলে সন্ত্রাসী আরাকান আর্মি জোরপূর্বক আটকে রাখতো। তারপর জান্তার প্রতিরোধ ঠেকাতে রোহিঙ্গাদেরকে মানবঢাল হিসেবে সামনে রাখে সন্ত্রাসী আরাকান আর্মি। মানবঢালের থাবায় পৃষ্ঠ হয়ে অসংখ্য মাজলুম রোহিঙ্গা শাহাদাতবরণ করেন।

অক্টোবর ২০২৩ সালে সন্ত্রাসী আরাকান আর্মি (AA) রোহিঙ্গা মাজলুমদের বিরুদ্ধে এক ভয়াবহ অভিযান চালায়। বুথিডং, রাথিডং এবং পুরো আরাকান জুড়ে এই সহিংসতার ফলে ২ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা মুসলিম তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়। হাজার হাজার মুসলিম শহীদ হয় এবং অসংখ্য মুসলিম আহত হয়।

২০২৪ সালে ১৭ মে আরাকানের বুথিডংয়ে মগ সন্ত্রাসী আরাকান আর্মি ৬০০ এর অধিক রোহিঙ্গা মুসলিমকে টার্গেট করে গণহত্যা চালায় কিন্তু সেই সময় এত বড় হত্যাকাণ্ড নিয়ে কোনো মিডিয়া কাভার করেনি

২০২৪ সালের ৫ ই আগস্ট বাংলাদেশ সীমান্তের কাছে মগ সন্ত্রাসী আরাকান আর্মি রোহিঙ্গাদের উপর এক ভয়াবহ ড্রোন হামলা চালায়। এতে ৩০০-এরও বেশি রোহিঙ্গা মুসলিম শহীদ হয়।

২০২৫ সালের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত সন্ত্রাসী আরাকান আর্মি ২,৫০০ এর বেশি রোহিঙ্গা মুসলিমকে হত্যা করেছে এবং ৩ লাখেরও বেশি মানুষকে তাদের বসতি থেকে উচ্ছেদ করেছে।

এছাড়াও হাজার হাজার রোহিঙ্গাদের নির্মমভাবে শহীদ করা হয়, যার খবর মিডিয়াতে আসেনি। ইদানীং রোহিঙ্গাদের গ্রামের পর গ্রাম থেকে রোহিঙ্গাদের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতি করার কারণে বাংলাদেশে বহুসংখ্যক রোহিঙ্গারা আশ্রয় নিচ্ছে। এভাবেই আরাকানের থাকা মাজলুম রোহিঙ্গারা সন্ত্রাসী আরাকান আর্মির গনহত্যা থেকে বাঁচতে বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নিতে থাকেন।

শেষ পর্যন্ত লক্ষ্যাধিক রোহিঙ্গা আরাকানে অবস্থান করছে। যাদেরকে প্রতিনিয়ত সন্ত্রাসী আরাকান আর্মি বিনাশ্রমে কাজ করাচ্ছে, নিজের বাড়িতে প্রবেশ অথবা বাহিরের জন্য চাঁদা দেওয়া থেকে শুরু করে গৃহপালিত পশু পালন করলেও চাঁদা দিতে হচ্ছে। বাড়িতে নতুন অতিথি বা রোহিঙ্গা শিশু জন্ম নিলেও চাঁদা দিতে বাধ্য করে সন্ত্রাসী আরাকান আর্মি। সাগরে রোহিঙ্গা জেলেদের মাছ ধরার অর্ধেক অংশ আরাকান আর্মিকে দিতে হয়।

তাছাড়া আরাকানের রাস্তা ব্যবহারের ক্ষেত্রে যানবাহনের অনুপাতে রোহিঙ্গাদের চাঁদা দিতে বাধ্য করা হচ্ছে। কিন্তু রাখাইনরা কোনো চাঁদা ছাড়াই রাস্তা ব্যবহার করছে। আরাকানের রোহিঙ্গা ব্যবসায়ী এবং দোকান মালিকদের জোরপূর্বক চাঁদা দিতে হচ্ছে। আরাকানের রোহিঙ্গা স্কুলে রোহিঙ্গা শিক্ষকদের চাকরি থেকে বাধ্যতামূলক সরিয়ে রাখাইন শিক্ষকদের চাকরি দেওয়া হচ্ছে। তাছাড়া বাংলাদেশে চিকিৎসা করতে যাওয়া রোহিঙ্গাদের উপরও চাঁদা দিতে বাধ্য করে আরাকান আর্মি।

আরাকানে রোহিঙ্গা পুরুষদেরকে নিজ বাড়িতে অবস্থান করলে আরাকান আর্মি গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়। তারা চায় নারী-শিশুদের সাথে কোনো অভিভাবক না থাকুক।

বর্তমানে আরাকানের পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ গণহত্যার দিকে নিয়ে যাচ্ছে। এভাবে পরিস্থিতি চলতে থাকলে পৃথিবী থেকে একটি মুসলিম জাতি নীরবে বিলীন হয়ে যাবে। একজন মুসলিম হিসেবে আমরা তা হতে দিতে পারি না। মজলুমদের পাশে অভিভাবক হিসেবে আমাদের দাড়াতে হবে। অন্যথায় আল্লাহ আমাদের ক্ষমা করবেন না।

Follow Us